বিভিন্ন নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে যুব সমাজ। এই সব নেশার মধ্যে যেমন আছে সিগারেট, বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। তেমনি আছে, বিবাহ বর্হিভুত প্রেম ভালোবাসা, পরকীয়া, পর্ণগ্রাফি, বিভিন্ন বিকৃত যৌনাচার, বিভিন্ন প্রকার জুয়া, গেইম খেলা, সোস্যাল মিডিয়া - এই সবগুলোই নেশা। প্রথমে হয়তো কৌতুহলের বশে পরীক্ষামূলক ভাবে এর কাছে যায় মানুষ, কিন্তু পরে এতে আসক্ত হয়ে পড়ে। এসবের যে কোনোটাতে আশক্ত হবার পর, অনেকেই এই জগত থেকে মুক্তি চায়। যারা আসক্ত তাদের জন্য এবং যারা এখনো আসক্ত হননি তারা যেন আসক্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে সেই জন্য কিছু পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করছি।
এখানে কোনো শর্টকাট নেই। নিজেকেই মনোবল তৈরী করতে হবে, আর নিজেকেই শুধরাতে হবে। সেই কাজের সহায়তার জন্য এটা গাইডলাইন মাত্র।
এই কাজ ৪টি শুরু করুন একই সাথে:
(ক) শক্তিশালী মানসিকতা তৈরী করা,
(খ) পরিবেশ তৈরী করা,
(গ) মনকে খাবার দেয়া,
(ঘ) দায়িত্ব সচেতন হওয়া।
আর এই চারটি কাজ করার জন্য বিভিন্ন ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে পারেন নিচের বর্ণনা থেকে। সেগুলোর মধ্যে যতগুলো সম্ভব ততগুলো শুরু করুন।
তাই পরিবারের সাথে মেশার সুযোগ না থাকলে তার উচিত পরিবার তৈরী করা। হতে পারে নিজের পরিবার গঠন। কিংবা হতে পারে অসহায় মানুষকে আপন করে নেয়া।
ঘুমিয়ে থাকা অবস্থা ছাড়া মানুষের মন সব সময় কিছু না কিছু চিন্তা করতেই থাকে। যদি আপনি মনকে ভালো কোনো কাজ না দেন, তাহলে শয়তান সেই সুযোগটা নেয়। তখন শয়তান আমাদের মনকে কাজ দেয়।
নেশা হতে পারে-- আপনার আবেগ, আপনার লোভ, কোনো অ্যাপ, কোনো গেইম, ইন্টারনেটের জগত, পর্ণগ্রাফি, যে কোনো নেশার দ্রব্য বা নেশার মাধ্যম। মোট কথা, আপনি নিজে নিয়ন্ত্রণ ধরে না রাখলে, নিয়ন্ত্রণ করবে শয়তান।
আপনার মনকে মন্দ বা অপ্রয়োজনীয় চিন্তা তেকে মুক্ত রাখতে চাইলে, মনের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে হবে আপনাকে। আর তাই, আপনার মনকে কাজ দিতে হবে, আপনার নিজেকেই।
দিনের বেশীরভাগ সময় হয়তো আমরা এমন সব কাজে ব্যয় করি, যার জন্য কিছুদিন পরে গিয়ে আক্ষেপ করি, হায় সময়টাকে কাজে লাগাইনি কেন। পরবর্তীতে আপেক্ষ করার সুযোগ না সৃষ্টি করে, বর্তমানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতো হবে। আমাদের একান্ত জরুরী জ্ঞান অর্জনের একাধিক উৎস আছে। সেই জ্ঞান অর্জনে মনোযোগ দিলে, একই সাথে একাধিক ইতিবাচক কাজ হয়। তার মধ্যে এটা তো আছেই যে, সময়টা শয়তান পায় না।
আল কুরআন হলো মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার চিঠি। এই চিঠি না পড়াটা, আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের ব্যাপার।
আল কুরআন হলো
আকর্ষণীয় একটি গ্রন্থ। যার ভেতরের মজা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা।
একটি আবশ্যক বা ফরজ কাজ হলো কুরআন পাঠ করা। এটা শুধু দায়িত্বই নয়, এর মধ্যে আকর্ষণও আছে।
কুরআনে সবগুলো সূরার নাম কি জানি? কুরআনে এমন এমন বিষয়ে কথা বলা হয়েছে, যেগুলো হঠাৎ শুনে আমরা ভাবি,
কুরআনে এ বিষয়েও কথা বলা আছে? আসলে তো আমরা কুরআন পড়িনা, বুঝিনা। আসুন কুরআনে আসলে কি কি আছে
সেটা নিয়ে একটু কৌতুহল দেখাই, একবার মনোযোগ দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি।
জ্বীন শয়তান এবং মানুষ শয়তানদের চক্রান্তে, আমরা আল-কুরআনকে ভয় করতে শিখেছি, এটা থেকে দূরে থাকা শিখেছি।
আমরা এটার পড়ার মধ্যে যে মজা সেটা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।
অনেক মোটা মোটা বই পড়ে মজা পাই, কুরআন ছুঁয়ে দেখি না।
আবার এটার মধ্যে আকর্ষণও রয়েছে। আর
কুরআন কিন্তু অপশনাল (ঐচ্ছিক) নয়, এটা মুসলিমদের জন্য আবশ্যিক।
এখানে একই সাথে একটি ফরজ আদায় হবে,
আনন্দ বা মনের খাবার পাবো,
আবার সময়গুলো বিকৃত খরচ করা থেকেও বেঁচে যাবো।
কুরআন পড়া শুরু করার আগে একটি বই পড়ে নিতে পারেন, কাজে দেবে আশাকরি। বইটির নাম "পড়ো"। অনলাইনেও পাওয়া যায়।
এছাড়াও নোমান আলী খানের কিছু ব্যাখ্যা শুনতে। আর তাতে কুরআনের স্বাদ সম্পর্কে ধারণা পাবেন আশাকরি।
অনলাইনে একাধিক ওয়েবসাইটে কুরআন অর্থসহ পড়তে পারেন (সাথে তিলাওয়াত শুনতেও পারেন)।
জ্ঞান অর্জন আমাদের জন্য ফরজ। আমরা সেই জ্ঞান অর্জনকে স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমের সিলেবাসের সাথে মিশিয়ে দিয়েছি।
নামাজ পড়তে হয় সেটা সবাই জানি। হয়তো অনিয়মিত পড়ি, অথবা নিয়মিত। কিন্তু, নামাজের স্বাদ আমরা কি পাই? নামাজ পড়ার প্রতি কি আমাদের আগ্রহ আছে? আমরা অনেকেই নামাজ অপরিহার্য বলে, গুনাহের ভয়ে, কিংবা অভিভাবকরা বকা দেবে সেই জন্য পড়ি। দায়সারা নামাজ আমাদের দায় থেকে মুক্তি হয়তো দেবে কিন্তু, আমরা এর থেকে উপকারিতা পাবো না। নামাজের স্বাদ পেলে আপনি নিয়মিত সেটা পড়বেন, আগ্রহ নিয়ে। সেই স্বাদ পাবার জন্য, নামাজের মনোযোগ সম্পর্কে পড়াশোনা করুন। এটাকে বলে নামাজের "খুশু"।
সকালে এবং সন্ধ্যায় আমরা কিছুটা সময় দোয়ার মধ্যে ব্যয় করতে পারি। যারা দোয়া করা শেখেনি, তারা তৈরী অবলম্বন করে মেডিটেশন।
নির্দিষ্ট কিছু ছোট ছোট দোয়া আছে, যা বিশেষভাবে সকালে এবং সন্ধ্যায় পাঠ করতেন আমাদের রাসুল স.।
উপরে উল্লেখ করা কুরআন তিলাওয়াত, নামাজ, এবং দোয়া -- এ সবই হলো আল্লাহ্র যিকর্। আর, আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন:
"তারাই ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমেই দিলের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়।" — [সূরা রা'দ : ২৮→]
জীবনের লক্ষ্য: মানুষের জীবনের লক্ষ্য কি? সেটা ভাবুন। পৃথিবীর জীবনটা কষ্টকর। কেননা জীবনের প্রতিটি মুহুর্তই হলো মানুষের জন্য পরীক্ষা। পার্থিব জীবনের পথে পথে কাঁটা সেগুলো হাসিমুখে সরিয়ে ফেলে সামনে এগুনোই মানুষের মূল কাজ। কিভাবে কাটাচ্ছেন প্রতিটি মুহুর্ত সেটাই দেখছেন সৃষ্টিকর্তা।
জ্ঞান অর্জন: সত্য জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট হোন। মানুষ হিসেবে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জানুন। সৃষ্টিকর্তা কি দায়িত্ব দিয়ে আমাদের পাঠিয়েছেন। নিজে নিজে অনুমান করে নিলে চলবে না। কারণ, আজ (খুব সম্ভব) বেশীরভাগ মুসলিমের কমনসেন্স দাঁড়িয়ে আছে ভুল তথ্যের উপরে ভিত্তি করে। যে কোনো কারো পরামর্শ নেয়াও ঠিক হবে না। জানতে হবে, যে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং পাঠিয়েছেন এই পৃথিবীতে, তিনি আসলে আমাদের কি দায়িত্ব দিয়েছেন। আর সেটা জানার জন্য আমাদের কাছে রয়েছে আল-কুরআন।