এই সময়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। আর তাই মানুষের প্রশ্নও বাড়ছে। কিভাবে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিভাবে এটা প্রতিরোধ বা প্রতিকার করা যায়?
কোনো এক বা একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতে মানুষের মন খারাপ হয়। তবে সেই মন খারাপের মাত্রা কিংবা স্থায়িত্ব যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন সেটিকে বলে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা।
(ঙ) শয়তানের জন্য সুবর্ণ সুযোগ:
ওলামায়ে কেরামের মত হলো: শয়তানের পাঠশালার প্রথম পাঠ হলো দুশ্চিন্তা আর হতাশা। এই পাঠের মাধ্যমে শয়তান ঢুকতে শুরু করে।
(চ) কবীরা গুনাহ ও কুফরী:
আধুনিকতার নানা উপকরণে ভরে যাচ্ছে বর্তমান সভ্যতা। আর এগুলো নিয়ে অনেক মানুষের মাতামাতি পৌঁছে গেছে বাড়াবাড়িতে। এই আধুনিকতা নানা উপকরণ, যেমন: পোশাক, বাড়ি, গাড়ী, কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদি।
জ্ঞান, মনুষ্যত্ব, মানবিকতা, শালীনতা এরকম এসবের পরিবর্তে আজ মানুষ মানুষ মানুষকে বিচার করে অন্য কিছু দিয়ে, সেটা হলো, আধুনিক উপকরণগুলো যার যত বেশী আছে, সে ততটা আধুনিক ও সফল।
মানুষ তার আশেপাশের লোকদের সমান হতে ব্যাকুল--
এটা তো শুধু বাড়ির উদাহরণ, এইভাবে বিভিন্ন কিছুতে মানুষ একে অপরের প্রতিযোগী। শিশু, কিশোর, মধ্যবয়সী, বড়রা; পুরুষ এবং নারী সবাই কারো না কারো সমান হতে চায়, অথবা অন্য একজনকে টপকিয়ে তার চেয়ে বড় হতে চায়, তার চেয়ে বেশী কিছুর মালিক হতে চায়।
অন্যভাবে বললে এই সময়ে মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশী দুনিয়ামুখী। পৃথিবীতে কি কি অর্জন ও ভোগ করতে পারছি সেটা নিয়ে মানুষের মাথাব্যথা বেশী। অন্যের সম্পদ ও অবস্থা দেখে ইর্ষান্বিত হবার প্রবণতা বেশী।
সম্পদ অর্জন হারাম নয়। কিন্তু আজকের সমাজে সম্পদ এবং আধুনিকতার সামগ্রীগুলোর প্রতি মানুষের যে ঝোঁক বা ততৎপরতা সেটা অনেকটাই অসুস্থ। এখানে লোভ এবং জ্বিদ এই আকাঙ্খাগুলোকে অসুস্থ্য করে তুলেছে। যেখানে মানুষ আধুনিকতার জন্য নৈতিকতাকে বিসর্জন দিচ্ছে অনায়াসে। মানুষ আগেও সম্পদ আহরণ করতো। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। আর তাই বলা যায়, ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার আধিক্যের পেছনে মূল কারণগুলো হলো:
এখানে বেশ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি। সেগুলো আলাদা আলাদা দৃষ্টিকোণ। এগুলোর সবগুলো সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। তবে এর সবগুলো না হলেও, এগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি বিষয়েও যদি কারো পরিস্কার ধারণা থাকে, তাহলেই তার স্বপ্ন-ভঙ্গের প্রচণ্ড কষ্ট, হতাশা, ডিপ্রেশন এগুলো থাকার কথা নয়। বিষয়গুলো হলো:
উপরে আধুনিকতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। তো আধুনিকতাকে পুরোপুরী বর্জন করতে হবে - তা বলতে চাচ্ছি না। তবে,
আধুনিক উপকরণগুলো ব্যবহার করেও কিভাবে লোভ, হিংসা, অলসতা, সময় নষ্ট করা, অশালীনতা, ধর্মহীনতা, অনৈতিকতা ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা যায় সেটা খেয়াল রেখেই এগুলো ব্যবহার করতে হবে।
আর সম্পদ এবং আধুনিকতার উপকরণগুলোর অনেকগুলোই অর্জন করার চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু সেই চেষ্টার সাথে অনৈতিক পথ অবলম্বন করা যাবে না। সৎ পথে চেষ্টা করে সেগুলো অর্জন করতে না পারলে, সেটাকে আল্লাহ্র ফলসালা বলে মেনে নেবার মানসিকতা রাখতে হবে।
এই পৃথিবীতে মানুষকে কেন পাঠানো হয়েছে, এখানে তার কাজ কি? - এটা নিয়ে ভেবে দেখা প্রয়োজন।
আল কুরআন আমাদের সাবধান করে:
"...তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।" — [আল-বাক্বারাহ ১৩২]
তাহলে, মৃত্যু তো যে কোনো সময় আসতে পারে। তাই আমাদের জানতে হবে মুসলিম থাকার জন্য আমাদের করণীয় কি কি। আর সেই ভাবেই চলতে হবে। অতএব,
আমাদেরকে পরীক্ষার কথা মাথায় রাখতে হবে, মুসিলম হিসেবে জীবন যাপন করতে হবে,
দায়িত্ব বুঝতে হবে। মোটকথা, ইসলাম আমাদের যে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের পথ দেখায়, সেভাবে জীবন যাপন করা শিখতে হবে।
অতএব,
তাই আমাদের এই ধারণা থাকা উচিত যে, এই পৃথিবী মানুষের স্বপ্ন অনুজায়ী সাজানোর মোটেও উপযুক্ত কোনো যায়গা নয়। আর আল্লাহ্ তায়ালা মানুষের জন্য যে ভালো নির্ধারণ করেন, সেটা পার্থিবও হতে পারে পারলৌকিক ভালোও হতে পারে। সুতরাং নিজের স্বপ্ন বা পরিকল্পনা থাকতেই পারে। কিন্তু সেটার ব্যাপারে খুব বেশী একরোখা না হয়ে, নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টার পাশাপাশি, আল্লাহ্র ফয়সালার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকাও প্রয়োজন।
আখিরাতের জীবনের তুলনায়, এই পৃথিবীর সময়কাল হলো, খুবই স্বল্প সময়।
আমাদের নবী (স.) এর ভাষ্য-- আখিরাতের জীবনের সময়কালের তুলনায়, এই পৃথিবীর জীবন হলো, সমুদ্রের পানিতে আংগুল ডুবিয়ে উঠালে যতটুকু পানি আংগুলে লেগে থাকে।
তাহলে এই পৃথিবীর জীবনটাকে, চলমান পৃথিবীর রীতি-রেওয়াজের সাথে সঙ্গতি রেখে সুন্দর করার চাইতে, এটাই কি ভালো নয়, যাতে পরকালীন জীবনটা সুন্দর হয়। আর তার জন্য আমাদের এই পৃথিবীতে সেইভাবে চলতে হবে, যেইভাবে চললে আল্লাহ্ আমারা উপর খুশী হন।
মানুষকে তার স্বপ্ন সাজাতে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়নি। মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, পরীক্ষা নেয়ার জন্য। সেই পরীক্ষায় সে কতটা ভালো করছে, তার উপর নির্ভর করছে তার পরবর্তী জীবন। তাই পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি পর্ব বলা যায় এই পৃথিবীর জীবনকে।
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। [আল-বাক্বারাহ ১৫৫]
আমাদেরকে যে কোনো সময় যে কোনো পরীক্ষার মুখোমুখী হতে হতে পারে। আর সেই পরীক্ষায় পাশ করার অন্যতম করণীয় হলো "সবর" করা।
ইসলাম অনুশীলনের কথা আসলে আমরা অনেকেই ভয় পাই।
ইসলামে বিনোদন আছে, ইসলামের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, ইসলামে রয়েছে সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও। তবে সব কিছুতে ইসলামের নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করতে হবে।
ইসলাম দুনিয়া এবং আখিরাত দুটোরই সমাধান দেয়। আর আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন দোয়া করতে,
"রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা ‘আযা-বান্না-র"
অর্থঃ হে আমাদের রব্ব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
ইসলাম সম্পর্কে আমাদের অনেকের মধ্যে ধারণা পরিস্কার নয়। আমরা মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া মুসলিমরা বেশীরভাগই ইসলামকে জানিনা। যার ফলে দূর থেকে ইসলামকে একটু আধটু জানি এবং একে দেখে ভয় পাই। দূরে দূরে থাকি। তাই আমাদের প্রয়োজন ইসলাম সম্পর্কে জানা। আর সে লক্ষ্যে আমদের উচিত:
ডিপ্রেশন আমাদের মনকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে, নিরাশ করে তুলতে পারে, অস্থির করে তুলতে পারে। অন্যদিকে মন আর অন্তরের খাদ্য হলো আল্লাহর যিকর (বা আল্লাহ্র স্মরণ)। তাই আল্লাহ্র যিকর আমাদের মনকে প্রশান্তি দিতে পারে। আল্লাহ্র যিকরের বিভিন্ন উপায় বা পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হলো:
(ক) কুরআন তিলাওয়াত।
(খ) আল্লাহ্র যিকরের আর একটি পদ্ধতি হলো সকাল ও সন্ধ্যার নির্দিষ্ট কিছু অনুশীলন। যেগুলো আল্লাহ্র নবী (স.) আল্লাহ্র কাছে নিবেদন করতেন। সেই আমলগুলো করা যেতে পারে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায়।
যেখানে নবী (স.) এর জীবনে বিভিন্ন কষ্ট এসেছে:
আমাদের ভেবে দেখা দরকার। রাসুল স. ছিলেন আল্লাহ্র প্রিয়পাত্র। প্রিয়পাত্র হবার পরেও তাঁর জীবনে কষ্টের পর কষ্ট এসেছে, তখন আমাদের জীবনে কষ্ট আসাটা স্বাভাবিক হবে না কেন?
মহানবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যখন তোমাদের কেউ মুসিবতে পড়ে, তখন সে যেন আমার জীবনের মসীবতের কথা স্বরণ করে (সান্ত্বনা নেয়)। কারণ আমার জীবনের মসীবত তোমাদের সবার মসিবতের চাইতে বড়।”
জীবনকে আমরা কিভাবে পরিচালিত করবো, তার জন্য আদর্শ একটি চরিত্র হিসেবে আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ স. এর জীবনে। আল কুরআন বলে:
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। [৩৩ সূরা আহযাব : ২১]
আয়াতটি আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু আমরা অনেকেই তাঁর (সা.) জীবনী জানিনা। ফলে তিনি আমাদের অনেকের কাছেই একজন দরিদ্র ধর্ম প্রচারক মাত্র। অথচ,
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। [৩৩ সূরা আহযাব : ২১]
মাওলানা তারিক জামিল এই আয়াত সম্পর্কে উল্লেখ করেন:
এ এক বিস্ময়কর আয়াত। সাধারণভাবে এর অনুবাদ যা করা হয় সেটা ভুল নয়। তবে আরো ভালোভাবে দেখলে-
"উসওয়া" শব্দটির একটি অর্থ 'নমুনা' বা 'আদর্শ', কিন্তু আরো একটি অর্থ হলো 'দু:খের সান্তনা'।
"লাক্বদ" কথা এটাই, আর কিচ্ছু নয়।
"কা-না লাকুম" - আল্লাহ্ তায়ালা বলছেন, এটা শুধু তোমার জন্যই বলছি।
অর্থাৎ-- বিশেষভাবে তোমাকে বলছি। আমার নবীর জীবনীকে অবলম্বন করো, তোমার বেদনায় প্রশান্তি পাবে, তোমার দু:খ কষ্ট দূর হবে।
আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য:
যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি। [৪ সূরা নিসা : ৮০]
আল্লাহ্ তায়ালাকে রাজী করতে পারলেই আমাদের জীবন সফল, আর সেটা করতে ব্যর্থ হলে আমাদের জীবনের ব্যর্থতা। আর আল্লাহ্ তায়ালার কাছে আমরা পৌঁছতে পারবো না, যতক্ষণ না রাসুল স. এর আনুগত্য করবো।
তাই আল্লাহ্র সন্তুষ্টি পেতে হলে আমাদের উচিত হবে, রাসুল স.এর জীবনী জানা। হাদীস জানা। এবং রাসুল স. কে অনুসরণ করা। জীবনের পদে পদে ত রাসুল (স.)এর অনুসরণ ও আনুগত্য করা।
আমাদের নবী (স.) এবং তাঁর সাহাবাদের জীবন থেকে নেয়ার মতো অনেক কিছুই আছে। যা দিয়ে আমরা আমাদের জীবনকে জাঁক জমকপূর্ণ হোক বা না হোক, মানসিক প্রশান্তিময় করতে পারি। আমরাআমাদের জীবনকে বানাতে পারি হতাশামুক্ত। পৃথিবীর জীবনকে প্রশান্তিময় করার পামাপাশি আখিরাতের দীর্ঘ জীবনের উপযুক্ত।
'আশা করা' তথা আল্লাহ্র প্রতি আস্থা - মানুষকে ইমানের পথে রাখে, যার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে সফল লাভ হয়।
অন্যদিকে, হতাশা - কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। কুফরী হলো আল্লাহ্ নেয়ামত অস্বীকার ও আল্লাহ্র রহমত পাবার ব্যাপারে অবিশ্বাস। তাই হতাশার মাধ্যমে শয়তান তাকে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে দেয়ার সুযোগ পায়।
মনে রাখতে হবে:
কঠিন সময়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দু'আ পড়তেনঃ
‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল আযীমুল হালীম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাববুল আরশিল আযীম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাববুস সামা-ওয়া-তি অরাববুল আরযিব অরাববুল আরশিল করীম।’ অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই; যিনি সুমহান, সহিষ্ণু। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই; যিনি সুবৃহৎ আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য আরাধ্য নেই; যিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও সম্মানিত আরশের অধিপতি। (বুখারী-মুসলিম)
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিয়মিত এ দু'আ পড়তেনঃ
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।’ অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
তাছাড়া হাদীসে আছে:
‘‘তুমি পুণ্যের কোনো কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’’ (অর্থাৎ হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও পুণ্যের কাজ)। [হাদীস]
‘‘...তোমার ভাইয়ের সামনে তোমার হাসি সাদকা স্বরূপ...’’ [হাদীস]
একজন বিশ্বাসী কখনো মৃত্যু প্রত্যাশা করতে পারে না, তার সমস্যা থেকে পালানোর জন্য। তার দোয়া করা উচিত: নবী (স.) দোয়া করতেন, আল্লাহ্ আমাকে ততদিন বাচিয়েঁ রাখুন যতদিন সেটা আমার জন্য ভালো। তখন আমাকে নিন, যখন আমার জন্য চলে যাওয়া ভালো।
স্বজনের মৃত্যু:
স্বজনের মৃত্যুতে শোক আসবেই। আপনজনের মৃত্যুতে সীমাহীন কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক।
স্বামীর মৃত্যুকালীন ইদ্দতে বিধবা স্ত্রীর শোক পালন করা ওয়াজিব এবং অন্যান্যদের মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা হারাম। [সূত্র]
ইসলাম আমাদের বলে, মৃত্যুর জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে। আর এই কথা মাথায় থাকলে একজন মুসলিম সর্বদা নিজের এবং প্রিয়জনদের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আর তাহলে সে কারো মৃত্যুর জন্য ডিপ্রেশনে যাবার প্রশ্নই আসে না।
আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে কষ্ট পাওয়া:
আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আমাদের সার্বক্ষণিক চলাফেরা। অনেক আত্মীয়-স্বজন আমাদের কষ্ট দেয়, বঞ্চিতও করে।
চাকুরী না পাওয়া বা ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়া:
বহু প্রত্যাশা পর চাকুরীটি না পাওয়া। কিংবা (মেডিকেল ইত্যাদি) নির্দিষ্ট কোনো যায়গায় ভর্তি হতে না পারা। নির্দিষ্ট দেশে যেতে না পারা।
এমন উদ্দেশ্য সফল না হলে, আমাদের চিন্তা করা উচিত -- হয়তো এই কাজটি আমার জন্য ভালো হতো না। হয়তো এর চেয়ে সফল আমি অন্য কোনে কাজের মাধ্যমে হতে পারবো। আল্লাহ্ তায়ালা হয়তো আমার জন্য অন্য ভালো কিছু দেয়ার জন্য তৈরী রেখেছেন।
তাই এরকম একটি কাজে ব্যর্থ হলে -- আল্লাহ্র উপর ভরসা রেখে, অন্য কোনো কিচুতে প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
সন্তান না হওয়া
আল্লাহ্ তায়ালা আল কুরআনের পরপর দুইটি আয়াতে ৪টি বিকল্পের কথা বলেছেন: (ক) কন্যা সন্তান (খ) পুত্র সন্তান (গ) পুত্র ও কন্যা উভয়ই (ঘ) বন্ধ্যা
‘‘...আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’’ [৪২ সূরা শুরা : ৪৯-৫০]
তাহলে, চারটি বিকল্পের মধ্যে "নি:সন্তান" হলো একটি। তাহলে কেও "নি:সন্তান" থাকবে না এটা তো হতে পারে না। সন্তান না হলে সেটাকে মেনে নিতে হবে।
মোটা, চিকন কিংবা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়:
সবার শারীরিক গঠন ভিন্ন ভিন্ন। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন এবং ছিলেন, যাদের অনেকেই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই শারীরিকভাবে তথাকথিত 'সুদর্শন', 'হ্যান্ডসাম', ছিলেন না।
সে দিক থেকে বলা যায়, সামনে এগিয়ে যাবার জন্য নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য বা নির্দিষ্ট শারীরিক গঠন নিয়ে বসে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আবার ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, মানুষের চরিত্র হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। সেটা যেমন আল্লাহ্ তায়ালার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পৃথিবীতে মানুষের কাছেও। তাই শারীরিক গঠন-এর কথা ভুলে গিয়ে ইসলামী আদর্শ ভিত্তিক চরিত্র গঠনে মন দেয়া প্রয়োজন।
আর, জীবনচর্যা / লাইফস্টাইল উন্নয়ন:
সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে আমরা
ভালো ও সুশৃংখল জীবনচর্যা (লাইফস্টাইল) অবলম্বন করতে পারি। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত রয়েছে এখানে:
সু-স্বাস্থ্যের জন্য করণীয়।
পরিশেষে,
আমাদের মন খারাপ হবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটার সাথে আমরা কি আচরণ করছি সেটাই দেখার বিষয়। মন খারাপের বিষয়টাকে মনে স্থান দিলে, সেটা নিয়ে ভাবতে থাকলে, তা আমাদের কোনো উপকার করে না বরং আমাদের ইহকাল এবং পরকাল উভয়টাকেই নষ্ট করে ফেলে। অন্যদিকে আছে 'সবর'। দূর্ঘটনা ঘটলে, আল্লাহ্র ফয়সালা হিসেবে সেটাকে মেনে নিয়ে সেটাতে ধৈর্য ধারণ বা সবর করার অর্থ হলো, আল্লাহ্র সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা। তাহলে আল্লাহ্ তায়ালাও আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। আর তাতে আমাদের ইহকাল সহজ হয়ে যাবে এবং পরকালও সুরক্ষিত থাকবে।