ইফতারকে উৎসব বানাতে গিয়ে আমরা এটাকে অস্বাস্থ্যকর করে ফেলি, অনৈসলামিক করে ফেলি। ইফতারে “সুন্নত”-এর নামে "খেজুর" যুক্ত করে দিয়ে আমরা যথেষ্ট মনে করি। তারপর এক গাদা জাঙ্ক দিয়ে উদরপূর্তি করি। আর তার প্রভাবে আমাদের সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য তথা ইবাদত বাধাগ্রস্থ হয় নানাভাবে।
আমাদের সিয়ামের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ আধ্যাত্মিক তথা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি। সেটার করলে, তার মধ্যেই আমরা কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও পেয়ে যেতাম। আমাদের অতিরিক্ত খাবারের কারণে আমরা ইবাদতে যেমন মনোযোগও সময় দিতে পারছি না অর্থাৎ সিয়ামের থেকে আধ্যাত্মিক অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, আর সেই সাথে স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও পাচ্ছিনা।
আসুন ইফতারকে উৎসব না বানিয়ে, ইফতার করি সংক্ষেপে, যাতে সেটা হয়ে উঠে ইসলামসম্মত। আর তাহলে সেটা নিজে থেকেই হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যসম্মত।
আমরা জানি, আমাদের নবী স. খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, তিনি কি খেজুরের পরে ইফতার হিসেবে একথালা খাবার খেতেন? এমন কোনো বর্ণনা দেখা যায় না। তাহলে যা কিছু আমরা ইফতারিতে খাচ্ছি সবটাই অতিরিক্ত।
আবেগ এবং ক্ষুধাকে প্রশ্রয় দিতে থাকলে তার চাহিদা বাড়তেই থাকে। থালাভর্তি ইফতারি শেষ করেও মনে হয় 'আরো কিছু থাকলে ভালো হতো', 'পরদিন নতুন কিছু চাই' ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ এই মাস হলো সংযমের।
আমরা সবাই দৈনন্দিন জীবনে কিছু না কিছু সংযম করেই থাকি। সেইসব বিষয়েই সংযম করে থাকি, যেগুলো আমাদের মনের মধ্যে "আবশ্যক" বলে সেট হয়ে গেছে। সেটার ক্ষেত্রে আমাদের কষ্ট মনে হয় না। ইফতারের সংযমের গুরুত্ব যদি আমরা বুঝতে পারি, তাহলে এটাও আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।
শুধুমাত্র খেজুর এবং পানি খেয়ে ইফতার সেরে ফেলা যায়। মাঝে মাঝে কোনো দেশী ফল খাওয়া যেতে পারে। এইভাবে সংক্ষেপে ইফতার সেরে নিয়ে। তারপর নামাজ আদায় করার পর রাতের খাবার শেষ করা ফেলা যায়।
ইফতারীর আয়োজনে যে সময় নষ্ট হয় সেটা আমরা ভ্রুক্ষেপ করি না। সেই প্রশ্নটাও মনে আসে না। কেননা আমরা রমজান মাসের গুরুত্বটাই বুঝি না।
আমাদের নবীর সাহাবীরা হারিয়ে যেতেন এই মাস আসলে। নিজের মতো করে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। আমরা জানি এই মাসে যে কোনো ইবাদতের গুরুত্ব কত বেশী বেশী। এই মাস আমাদের জন্য একটি সুযোগ, বেশী বেশী ইবাদতে সময় দিয়ে কিছু নেকী সংগ্রহ করে নেয়ার। তাহলে এরকম একটি মাস আমরা পেলে সেটা থেকে নেকি কামাই করে নিতে আমাদের তৎপর হয়ে উঠা বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি?
যখন সত্যিই আমরা এর গুরুত্ব বুঝতে পারবো, তখন চেষ্টা করবো, এই মাসের প্রতিটি ঘন্টা-মিনিট-সেকেন্ড যথাযথভাবে কাজে লাগানোর। তখন আর আমরা পারবো না অযথা সময় নষ্ট করে জাঁকজমক ইফতারীর আয়োজনে সময় নষ্ট করতে।
কিভাবে পরিবারের ইফতার সংস্কার করা যায়, সেটা নিজের মতো করে করতে হবে। পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করে, সবাইকে বুঝিয়ে আমাদের ইফতারের সংশোধন করা প্রয়োজন।
অন্য কাওকে ইফতার করালে নেকী পাওয়া যায়। এই কথা ভেবে অনেকেই এইরকম পার্টির আয়োজনে স্পৃহা পায়। আসলে বন্ধু-বান্ধবকে ইফতার করালে নেকী পাওয়া যাবে কি? নেকি পাওয়াই যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আমরা গরীব মানুষদের খুঁজে, তাদেরকে খাবারের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। সেটা নিশ্চয় কাজের কাজ হবে।