শারীরিক ব্যায়াম আজকের মানুষের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা আজ বেশীরভাগ মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মে পরিশ্রম নামক বিষয়টি প্রায় বাদই পড়ে গেছে। অথচ পরিশ্রম ছাড়া মানুষের শরীর ভালো থাকা সম্ভব নয়।
কিন্তু ব্যায়াম কেন দরকারী? শারীরিক উদ্দীপনা (বা ইনফ্লেমেশ) খুব পরিচিত রোগগুলোর পেছনে দায়ী। শরীরচর্চায় এ ধরনের উদ্দীপনার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ তৈরি হয়। পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর নড়াচড়া হলে, মাংসপেশিগুলো অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রাসায়নিক নিঃসরণ করে। আর প্রতিবার যখন ঘাম ঝরানোর মতো পরিশ্রম করা হয়, রক্তের শর্করা, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডগুলোর মাত্রার উন্নতি ঘটে। অন্যদিকে অলস বসে থাকলে এসব উপাদান বেড়ে গিয়ে শরীরে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে।
আলসেমি বা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা আমাদের তিলে তিলে নিঃশেষ করে।
শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়াম, কোনোটাই না করার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়, আর সেটা বিভিন্ন পরিচিত অসুখে সুপান্তরিত হচ্ছে। যেমন:
স্থুলতা,
উচ্চরক্তচাপ সহ বিভিন্ন হৃদরোগ,
ডায়াবেটিস,
হরমোনের ইমব্যালান্স,
এমনকি ক্যানসারও।
শরীরচর্চায় সুস্থ জীবন এবং দীর্ঘায়ু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মানুষের শরীর পরিশ্রম করার উপযোগী করেই তৈরী। কিন্তু আজ পরিশ্রমা না করার ফলে তার স্বাভাবিকতা ব্যাহত হচ্ছে। ব্যায়াম করার মাধ্যমে পরিশ্রমের অভাবকেই পূরণ করা হয়। যার ফলে আমাদের শরীরে পরিশ্রমের যে চাহিদা সেটি পূরণ হয়। ফলে শরীরের আভ্যন্তরীন কার্যক্রম ঠিকঠাক মতো চলতে পারে।
আলাদা আলাদা করে বলতে গেলে এর উপকারিতার তালিকা অনেক লম্বা।
ব্যায়াম করার কতগুলো ইতিবাচক দিক:
প্রভাবের ভিত্তিতে শারীরিক ব্যায়ামকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:
অ্যারোবিক ব্যায়াম: যেখানে বাড়তি শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, সেগুলো অ্যারোবিক ব্যায়াম । এগুলো শরীরের বড় মাংশপেশীগুলো ব্যবহার করে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এসব ব্যায়ামের লক্ষ্য শরীরের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসসহ সামগ্রিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সহনশীলতা বৃদ্ধি করা। এধরনের ব্যায়ামের উদাহরণ হল সাইক্লিং, সাঁতার, হাইকিং, টেনিস খেলা, ফুটবল খেলা ইত্যাদি।
অ্যানেরোবিক ব্যায়াম: যে ব্যায়ামে বাড়তি শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, সেগুলোকে এনারোবিক ব্যায়াম বলে। এগুলো শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মাংসপেশী গঠন ও হাড়ের সবলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া শরীরের ভারসাম্য বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। উদাহরণ: পুশআপ, বাইসেপ কার্লস, পুলআপ, ভারোত্তলন, ফাংশনাল প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।
ফ্লেক্সিবিলিটি/স্ট্রেচিং ব্যায়াম বা নমনীয়তার ব্যায়াম বা পেশীটান ব্যায়াম: এসব ব্যায়াম শরীরের মাংশপেশীর প্রসারণ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এধরনের ব্যায়ামের লক্ষ্য শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করা যাতে ইনজুরি বা আঘাতের প্রবণতা হ্রাস পায়।
আর হটাৎ করে অল্প কিছুদিন বেশী ব্যায়াম করে তারপর বন্ধ করে দেয়া - এভাবে লাভবান হওয়া যায় না।
আর অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। তাই অতিরিক্ত ব্যায়ামও ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ব্যায়ামের জন্য আলাদা সময় কিংবা বেশী পরিশ্রমে যদি ভয় পায়। তাহলে তার জেনে রাখা উচিত। অল্প শারীরিক ব্যায়ামেও অনেক সুফল পাওয়া যায়। এমনকি প্রতিদিন পাঁচ মিনিটের পথ হেঁটে অফিসে গেলেও স্বাস্থ্যের কিছু উপকার হয়। এভাবে শুরু করে আস্তে আস্তে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে। তবে, হটাৎ হটাৎ নয়
কোনো লাভ নেই। তাই এমনভাবে ব্যায়াম করা উচিত, যা নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রকার ব্যায়ামের মিশ্রন:
নির্দিষ্ট উপকারিতার জন্য নয় বরং, ব্যায়াম কে নিজের দৈনন্দিন কাজ-কর্মের অংশ বানিয়ে নিতে হবে।
ব্যায়াম কেবল একটি বয়সের মানুষের জন্য নয়। সব বয়সের মানুষের জন্য ব্যায়াম রয়েছে। বয়স বুঝে এবং শরীরের সামর্থ বুঝে ব্যায়াম করা উচিত।