পর্ণগ্রাফি দেখার নেশায় আজ ডুবে যাচ্ছে তরুণ সমাজ সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তাদের অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে, পর্ণগ্রাফি থেকে কিভাবে ফিরে আসবো?
এটা একটা নেশা, এই নেশা থেকে বের হতে চাইলেও, সেটা সম্ভব হয় না
জালে আটকে থাকার মতো অসহায় বোধ করে সে।
শুধু মাত্র 'ছেড়ে দিতে চাই' এই চিন্তাটা যথেষ্ট নয়। বের হতে হলে প্রয়োজন একটা শক্ত মানসিকতা তৈরী করা।
পাশাপাশি, মনকে এমন কিছু খোরাক দিতে হবে, যেটা নিয়ে সে ব্যস্ত থাকে।
আর এই খোরাক হিসেবে সবচেয়ে ভালো কোন জিনিসটা হতে পারে,আসুন দেখি।
শিকারীর টোপ খেতে খেতে বেখেয়ালে কখন
ফাঁদের ভেতরে পা দিয়ে ফেলে প্রাণীটি সেটা বুঝতেও পারে না। যখন পা আটকে যায়, তখন আর
টানাটানি করে মুক্তি মেলে না।
এরকমই নানা ফাঁদ পাতা আছে আজকের এই অত্যাধুনিক পৃথিবীতে।
পর্ণগ্রাফি তাদের মধ্যে অন্যতম।
এ থেকে বের হওয়া সহজ নয়।
কেননা এর মধ্যে আছে প্রবল আকর্ষণ, পর্ণগ্রাফি হয়ে উঠেছে সহজলভ্য, সমাজ-পরিবার কেও জানতে পারছে না - আছে গোপনীয়তার সুযোগ।
এখানে কিছু পদক্ষেপের কথা বলতে চায়, যা এই নেশা থেকে বাঁচাতে সাহায করবে ইন'শা আল্লাহ্।
পর্ণগ্রাফি থেকে বাঁচার জন্য ৪টি পদক্ষেপের কথা বলবো।
ক. পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে শক্তিশালী মানসিকতা তৈরী করা
খ. মনকে ব্যস্ত থাকার ব্যবস্থা করা
গ. সুস্থ পরিবেশ তৈরী করা
ঘ. যথাসময়ে বিয়ে করা
প্রথম তিনটি কাজএই সাথে শুরু করতে হবে। চতুর্থটি যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তাদের জন্য।
ক. পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে শক্ত মানসিকতা তৈরী করা:
পর্ণগ্রাফি খারাপ, একথা জানেন মানেন এবং এটা থেকে বের হতে চান। কিন্তু
শুধু "খারাপ" এটুকু জানা যথেষ্ট নয়।
এর বিরুদ্ধে
শক্ত মানসিকতা তৈরী করার জন্য জানুন এটা কিভাব দীর্ঘ মেয়াদে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে থাকে।
যেমন:
-
যারা এতে আসক্ত তারা জানেন যে, তারা একটি অপরাধ করছেন, পাপ করছেন।
তারা এও মনে করেন যে, ভবিষ্যত পার্টনারের সাথে ধোকা দেয়া হচ্ছে।
সেই অপরাধবোধ বা পাপবোধ তাদের তাড়া করতেই থাকে।
ফলে অনেক সময় সে বিষন্নতা ইত্যাদিতে ভোগে।
-
পর্ণগ্রাফিতে যা দেখানো হয়, সেগুলোর মধ্যে অনেক কৃত্রিমতা রয়েছে।
যেগুলো মনের মধ্যে বিভিন্ন ভুল ধারণা সৃষ্টি করে।
পর্ণগ্রাফি দেখার পর সে তার বাস্তব জীবনের সঙ্গীর মধ্যে ঐসব কিছু খুঁজতে চাইবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে পায় না।
কারণ
- পর্ণগ্রাফিতে আর্টিস্ট তথা অভিনেতারা অভিনয় করে।
- ছবিতে দেখা সৌন্দর্য এবং আচরণের মধ্যে থাকে অভিনয়।
- সেখানে এডিটিং এর সুযোগও নেয়া হয়।
- পর্ণগ্রাফিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলোকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়।
তাই বাস্তব জীবনের যৌনাচার পর্ণগ্রাফির সাথে মেলাতে না পেরে সে সন্তুষ্ট হতে পারে না। এটা দু'জনকেই মানসিক
অশান্তি দেয়।
-
পর্ণগ্রাফির মানুষকে
প্রকৃত যৌনাচরের জন্য
উদ্বুদ্ধ এবং উত্তেজিত করে, ঐ সময়ে তার পাশে তার বৈধ যৌন সংগী (স্বামী/স্ত্রী) না থাকার ফলে,
সে বিকৃত কোনো যৌনাচরণে আগ্রহী হবে
এটাই স্বাভাবিক।
-
পর্ণগ্রাফির সাময়িক কিছু আনন্দ দেয় বটে, কিন্ত স্বাভাবিক
যৌনাচারে একটি নির্দিষ্ট শুরু ও শেষ থাকে, তেমন এখানে থাকে না।
বিক্ষিপ্তভাবে শুরু এবং বিক্ষিপ্তভাবে শেষ হয়।
অর্থাৎ স্বাভাবিক যৌনাচারের সময়
মনের মধ্যে এবং শরীরের মধ্যে বিভিন্ন সুক্ষ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
পর্ণগ্রাফি দেখার সময় বা বিকৃত যৌনাচারের ক্ষেত্রে সেগুলো সেভাবে ঘটে না।
এতে ২টি সমস্যা দেখা দেয়-
(১) স্বাভাবিক যৌনাচারে যে তৃপ্তি হতো, সেটা এখানে পরিপূর্ণভাবে
হয় না বিধায় অপূর্ণতা বা ক্ষুধা থেকেই যাচ্ছে। মানসিকভাবে তৃপ্ত না হবার কারণে কেও
বার বার পর্ণগ্রাফিতে ফিরে আসে।
কেও কেও বিকৃত যৌনাচারের দিকে যেমন, অবৈধ সম্পর্ক, অস্বাভাবিক সম্পকে যায়,
কেও কেও হিংস্র হয়ে ওঠে,
এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটাতে উদ্বুদ্ধ হয়।
(২) যৌনাচারের প্রকৃয়াগুলো স্বাভাবিক নিয়মে সম্পন্ন না হওয়ার ফলে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনাও তৈরী হয়।
ঘ. বিয়ে করতে হবে যথা সময়ে
ক্যারিয়ার ইত্যাদির চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।
একটির জন্য অন্যটি স্যাক্রিফাইস করাটা কি ঠিক হচ্ছে? একটা উপকারের আশায় অন্য একটা ক্ষতি হচ্ছে।
কোনটার লাভ কতটুকু, আর কোনটার ক্ষতি কতটুকু এটা পরিমাপ করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
বিয়ে করুন বয়স হবার সাথে সাথে। বিয়ে আপনাকে পাপ থেকে বাঁচাবে, শরীরের ক্ষতি থেকে বাঁচাবে, বিকৃত চিন্তা থেকে বাঁচাবে। অপরাধ থেকে বাঁচাবে। সুস্থতার দিকে নিয়ে যাবে।