অমুসলিমদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে এই গ্রন্থ 'আল-কুরআন' কি সত্যিই সৃষ্টিকর্তার বাণী?
এদিকে, ইসলামের বিরোধীরা নানা রকম যুক্তি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, কেও বলে এটি মানব রচিত গ্রন্থ, কেও বলে বাইবেল থেকে নেয়া, আরো কত কি। আজ প্রথম নয় এই প্রচেষ্টা চলে আসছে সেই সময় থেকে, যখন কুরআন কেবল নাযিলের হচ্ছিলো। তো, কিভাবে বুঝবো এর সত্যাসত্য। আল-কোরআনের সত্যতার প্রমাণ কি?
নিচের যুক্তিগুলো থেকে নিজেই খুঁজে নিন উত্তর:
(ক)
আল-কুরআনে দাবী করা হয়েছে যে, এটা অবিকৃত থাকবে। আর আজ পর্যন্ত অবিকৃত রয়েছে। পূর্ববর্তীতে ছাপানো কুরআনের কোনো কপির সাথে বর্তমান সময়ের কোনো কপি তুলনা করলে কোনো বিকৃতি পাওয়া যায় না। এটি একটি প্রমাণ।
(খ)
কোনো কোনো আলেম এভাবে বলেন যে, (পয়েন্ট১) আল-কুরআনের ৮০% তথ্যের ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, সেগুলো সঠিক। (পয়েন্ট২) আর ২০% তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি কারণ সেগুলো মানুষের আওতার বাইরে। (পয়েন্ট৩) এমন কোনো তথ্য নাই যেটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে, যেখানে ৮০% তথ্য সঠিক আর কোনো ভুল পাওয়া যায়নি, তাহলে বাকী ২০% তথ্য সঠিক হবে সেটা ধরে নেয়া অবান্তর হবে না বরং যুক্তিসংগতই হবে।
(গ)
নবী হযরত মুহম্মদ (স.) ছিলেন নিরক্ষর।
তিনি পড়তে জানতেন না, লিখতে জানতেন না।
তারপরও,
(ঘ)
আল-কুরআনে এমন অনেক তথ্য রয়েছে। যেগুলো কুরআন আসার অনেক পরে মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব হয়েছে। যেগুলো আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে মানুষ বাস্তব পৃথিবী থেকে জানতে পেরেছে আল-কুরআন আসার অনেক পরে।
“অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি ...” [২৩ মু'মিনূন:১৩-১৪]
[২৫ ফুরকান: ৬১] [৭১ নূহ: ১৬]
“(আল্লাহই) সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।” [৩৬ ফুরকান: ৪০]
উদাহরণ হিসেবে এখানে মাত্র কয়েকটি দৃষ্টান্তউল্লেখ করা হলো। আল-কুরআনে এমন অনেক অনেক সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম তথ্য লুকায়িত রয়েছে। সেসবের মধ্যে যেমন রয়েছে মহাকাশ, গভীর সমুদ্র, মানুষের শরীরের আভ্যন্তর, মৌমাছির কার্যক্রম, পিঁপড়ার জীবনযাপন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গভীর ও সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম তথ্য। যা স্বাক্ষর বহন করে এগুলো ততকালীন কোনো মানুষের জানা থাকার কথা নয়। আর তাই এটাই স্বাভাবিক যে এই আল-কুরআন সৃষ্টিকর্তারই বাণী।
(ঙ) আল-কুরআন অপরিবর্তনীয় গ্রন্থ:
পূর্ববর্তী যত নবী-রাসুল এসেছে। সেই সব নবীদের দায়িত্ব ছিলো নির্দিষ্ট কোনো জাতী বা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। কিন্তু শেষ নবী এবং ও আল-কুরআন হলো কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বের সব মানুষের জন্য।
পূর্ববর্তী গ্রন্থগুলো অপরিবর্তনীয় থাকবে এমন ঘোষণা দেয়া হয়নি।
কিন্তু আল-কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষণা করেন,
“... আর আমি নিজেই এর সংরক্ষক।” [১৫ সূরা হিজর : ০৯]
অন্য ধর্মাবলম্বিরা তাদের যে গ্রন্থকে সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহ্র) বানী বলছে, সেই গ্রন্থ অপরিবর্তিত নেই। গ্রন্থগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছিলো, এবং সেগুলো 'বিকৃত হবে না' এমন কথাও বলা হয়নি। মানুষ সেই গ্রন্থকে পরিবর্তিত করেছে। যেমন- বাইবেলের মধ্যে বিভন্ন পৃষ্ঠায় বর্ণিত একই তথ্য ভিন্ন ভিন্ন, যা প্রমাণ করে যে, সেটা মানুষের দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছে।
পৃথিবীতে অন্য কোনো গ্রন্থ নেই, যা চৌদ্দশ বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় বিরাজমান। কিন্তু ব্যাতিক্রম "আল-কুরআন"। যা প্রমাণ করে, এর ভেতরে উল্লিখিত আল্লাহ্ তায়ালার ঘোষণা সত্য। সে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক সংরক্ষিত এবং সৃষ্টিকর্তারই বানী।
আল-কুরআনের এই সব চ্যালেঞ্জ যে কোনো মানুষের জন্য সর্বদা উন্মুক্ত। এইসব বৈশিষ্ট যে কেনো মানুষের, যে কোনো সময় যাচাই করার সুযোগ রয়েছে। যাচাই করে নিন।
আরো অনেক সুক্ষ্ম তথ্য ছড়িয়ে আছে আল-কুরআনের এখানে সেখানে। তথ্যগুলো তাদের জন্য প্রমাণ, যারা চিন্তা ভাবনা করতে আগ্রহী, যারা প্রমাণ পেতে আগ্রহী। আর যারা প্রমাণ অস্বীকার করতে আগ্রহী, তারা এই পৃথিবীতে যে কোনো প্রমাণকেই অস্বীকার করতে পারে; পৃথিবী থেকে বিদায়ের পর আশাকরি তারা দোযখের সামনে দাঁড়িয়ে, দোযখের সত্যতাকে গলা ফাটিয়ে অস্বীকার করতে চাইবে না।