“ইসলাম” আরবী শব্দ যার অর্থ “আনুগত্য করা বা আত্মসমর্পন করা”।

ইসলাম শব্দটি ‘ইসতিসলাম’ (ﺍﺳﺘﺴﻼﻣﺎ) শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে কারো কাছে নত হওয়া, আত্মসমর্পণ করা।

সংক্ষেপে: ইসলাম বলতে এক আল্লাহ্‌র নিকট আত্নসমর্পণকে বুঝায়। অর্থাৎ মানুষ নিজের ইচ্ছা মতো চলবে না, সে আল্লাহ্‌ তায়ালার ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পন করার মাধ্যমে, আল্লাহ্‌ তায়ালার নির্দেশনা মেনে জীবন পরিচালনা করবে।

ইসলামে মানুষের জীবনকাল

এই পৃথিবীর প্রায় মাত্র ১০০ বছরের এই জীবনকালই পুরো জীবনকাল নয়। মৃত্যুর পরেও জীবন অব্যহত থাকবে। মানুষের প্রাণ বা রূহগুলো তৈরী করে রেখেছেন আল্লাহ্‌ তায়ালা। এরপর তাদেরকে একে একে পাঠাচ্ছেন এই পৃথিবীর বুকে। এই পৃথিবীতে মানুষে মৃত্যু হলে, তার জীবন শেষ হয়ে যায় না। কেয়ামত হলে পৃথিবীতে আসা সব মানুষকে স্বশরীরে উপস্থিত করা হবে হাশরের ময়দানে। সেখানে তাদের কৃতকর্মের হিসাব হবে।

“আর তারা বলত, ‘আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হব?’
‘আমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষরাও?’
বল, ‘নিশ্চয় পূর্ববর্তীরা ও পরবর্তীরা,
এক নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে অবশ্যই একত্র হবে’। ”
[65 সূরা ওয়াকিয়াহ :47-50]

সেখানে নির্ধারীত হবে কার স্থান জান্নাতে, আর কার জাহান্নাম।

এই পৃথিবীতে যারা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করবে, মৃ্ত্য পরবর্তী জীবনে তাদের স্থান হবে শান্তির যায়গা জান্নাতে (শান্তির যায়গায়)।আর বাকীদের স্থান হবে জাহান্নামে (কষ্টের যায়গায়)। সেখানে তাদের দীর্ঘ জীবন চলতে থাকবে।

ইসলামে সৃষ্টিকর্তার ধারণা। আল্লাহ্‌ তায়ালা কে?

ইসলামে "আল্লাহ্‌" হলেন - বিশ্বজগতের একমাত্র স্রষ্টা (সৃষ্টিকর্তা) এবং প্রতিপালক।

আরো অনেক গুণবাচক নাম থাকলেও, "আল্লাহ্‌" নামটিই মহান সৃষ্টিকর্তা প্রধানতম নাম। উল্লেখ্য, এই নামটির কোনো স্ত্রীলিংগ নেই।

আল কুরআনে বিভিন্ন যায়গায় আল্লাহ তায়ালার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। যেমন:

তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি অদৃশ্য এবং দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনিই অতি দয়াময়, পরম দয়ালু। # তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই। তিনিই অধিপতি, পবিত্র, নিরবদ্য, নিরাপত্তা বিধায়ক, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল, গর্বের অধিকারী। যারা তার শরীক স্থির করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র মহান। # তিনিই আল্লাহ সৃজনকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, রূপদাতা। সকল উত্তম নাম তাঁরই। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সমস্তই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। আর তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[৫৯ সূরা হাশর:২২-২৪]

আল কুরআনের আল্লাহ্‌ তায়ালার সংক্ষিপ্ত পরিচয় সম্বলিত একটি সূরা রয়েছে, মাত্র ৪ আয়াত বিশিষ্ট। সেখান সংক্ষেপে আল্লাহ্‌র তায়ালার পরিচয় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে:

“বলঃ তিনিই আল্লাহ, একক/অদ্বিতীয়।
আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন।
তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন।
এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই।”
[১১২ সূরা ইখলাস: ১-৪]

ইবাদতের যোগ্য কে?

ইবাদত পাবার যোগ্য একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই (আল্লাহ্‌ তায়ালাই), দ্বিতীয় আর কেও নয়। অন্য কোনো কাওকে বা কিছুকে ভক্তির উদ্দেশ্যে বা ভক্তির ভংগিতে কারো সামনে মাথা নত করা, কিংবা ইবাদতের উদ্দেশ্যে কাওকে ভক্তি করা যাবে না। এমনকি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক-কে-ও নয়।

নবী-রাসুলগণ:

আল্লাহ্‌ তায়ালার নবীগণ যুগে যুগ এসে, মানুষকে যে শিক্ষা দিয়েছেন তার প্রাথমিক কথা হলো, (সৃষ্টিকর্তা) আল্লাহ্‌ এক এবং তিনিই একমাত্র ইবাদতের যোগ্য।

আল্লাহ্ এবং তাঁর প্রেরিত নবী-রাসুল গণের নির্দেশিত আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী মানুষের শান্তি-শৃংখলাপূর্ণ জীবন যাপন করার জীবনব্যবস্থাই হচ্ছে ইসলাম। তাই ইসলামকে শান্তির ধর্ম বা জীবনব্যবস্থাও বলা হয়।

প্রথম মানুষ দ্বয়ের সাথে সাথে ইসলাম এই পৃথিবীতে এসেছে এবং কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এই পৃথিবীতে থাকবে, আল্লাহ্‌ তায়ালার মনোনীত একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে।

যুগে যুগে নবীগণ মানুষেকে আল্লাহ্‌র দেয়া নির্দেশনা মতো চলার উপদেশ দিয়েছেন। পূর্ববর্তী নবীদের এবং শেষ নবীর নির্দেশাবলীতে মূল বিষয়বস্তু এক হলেও কিছু বিষয় সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তণ করেছেন আল্লাহ্‌ তায়ালা। অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবীদের সময়ের নিয়ম-কানুন ছিল সে সময়ের মানুষদের জন্য। আর শেষ নবীর নির্দেশিত নিয়ম-কানুন বা গাইডলাইন হলো পৃথিবীর শেষ সময় পর্যন্ত পালানীয় বা অনুসরনীয়।

অপরিবর্তিত বিষয়বস্তু, যেমন: আল্লাহ্‌র একত্ববাদ তথা একমাত্র ইবাদতের অধিকারী হলেন আল্লাহ্ তায়ালা।

পরিবর্তিত বিষয়বস্তু যেমন: ঐ সময়ে মানতে হতো ঐ সময়ের নবীর নির্দেশনা। আল-কুরআন আসার পর থেকে মানতে হবে হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক এর নির্দেশনা।

হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক:

মোহাম্মদ এবং মুহম্মদ বানানেও লিখা হয়ে থাকে। (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক

পূর্ববর্তী নবীগণ এক একজন ছিলেন একটি নির্দিষ্ট জাতীর জন্য বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আর হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক হলেন তাঁর সময়কাল থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত অনুসরণীয়।

আল্লাহ্‌ তায়লা নিজে তাঁকে বিশেষভাবে শিক্ষা দান করেছেন এবং মানব জাতীর জন্য শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বানিয়েছেন। তিনি নিজের জীবনে প্রয়োগ করার মাধ্যমে, আল-কুরআনকে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। তাঁকে বলা হয় জীবন্তু কুরআন। তিনি আমাদের জন্য কুরআনের প্রায়োগিক উদাহরণ।কুরআনের কথাগুলো বোঝার ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে, তিনি (এবং তাঁর সঙ্গীরা) কি বুঝেছেন এবং কিভাবে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করেছেন।

তিনি হচ্ছেন মানুষদের জন্য রোল মডেল। শুধু আল্লাহ্‌র ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার বিষয়গুলো কিভাবে করেছেন তা নয় বরং দুনিয়ার প্রত্যেকটি কাজকে তিনি কিভাবে সম্পন্ন করেছেন - ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, স্বামি-স্ত্রীর সম্পর্ক, রাষ্ট্র পরিচালনা, ব্যবসা, মানুষের সাথে আচার-ব্যবহার, লেন-দেন কিভাবে করেছেন; যারা তাঁকে পছন্দ করেছে তাদের সাথে আর যারা তাঁর সাথে খারাপ আচরণ করেছে, শত্রুতা ও হিংসা করেছ তাদের সাথে তিনি কি আচরণ করেছেন; সমস্ত আচরণ (আদব-আখলাক) এ সবকিছু আমাদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন:

"তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।"
[৩৩ আহজাব: ২১]

ইসলামের প্রাথমিক বিষয়বস্তু:

আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ (মাবু'দ বা উপাস্য) নেই এবং হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহরই প্রেরিত রাসূল বলে সাক্ষ্য দেয়া ও তাঁর নির্দেশিত পথে নিজের জীবন চালানো, হালাল কে হালাল বলে মানা এবং হারামকে বয়কট করা, সালাত (নামায) কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমযানের রোযা রাখা এবং বাইতুল্লাহতে হাজ্জ আদায় করা (যদি সামর্থ্য থাকে)। এই প্রাথমিক বিষয়গুলো মেনে চলা ব্যক্তি হলো মুসলিম বা মুসলমান।

সুন্নত ও হাদীস:

হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক মানুষকে যা করতে বলেছেন, আর যা কিছু নিষেধ করেছেন, তাঁর সকল শিক্ষা-আদেশ-উপদেশ হলো তাঁর সুন্নত। তাঁর সুন্নতগুলো মেনে চলা আমাদের কর্তব্য। গুরুত্বের দিক দিয়ে আল-কুরআনের পরেই সুন্নতের অবস্থান।

এই সমস্ত সুন্নতগুলো বর্ণিত হয়েছে হাদীস সমূহে। হাদীস হলো রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক-এর কথা ও কাজ সমূহের বর্ণনা। হাদিসকে অনেক সময় আল-কুরআনের ব্যাখ্যা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। হাদীসের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। হাদীস সংকলন গ্রন্থের সংখ্যা অনেক।

ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মগুলোর পার্থক্য:

ইসলাম ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধর্মে "সৃষ্টিকর্তা একজনই" একথা বিশ্বাস করা হয়। এ দিক দিয়ে ইসলামের সাথে সেই সব ধর্মে মিল থাকলেও, "ইবাদত করবো কার" এই বিষয়টি নিয়ে রয়েছে পার্থক্য।

যদিও প্রতিটি ধর্মই মানুষকে মন্দ থেকে দূরে থাকতে বলে। কিন্তু ইসলামের পরিধি বা কার্যক্রম আরো ব্যাপক।

ইসলাম শেষবিচারের শিক্ষা দেয় যেখানে সৎকর্মশীলরা পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত পাবে আর পাপীরা জাহান্নামের সাজা পাবে। ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মধ্যে প্রধানতম হল ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ, যা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্যকর্তব্য। মুসলিমদেরকে ইসলামি আইন বা শরিয়াহ্ মেনে চলতে হয়, যা প্রকৃতপক্ষে সমাজ ও জীবনের সকল ক্ষেত্র ও যাবতীয় কার্যকলাপকে নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাঙ্কিং থেকে দান-সদকাহ্, নারী থেকে পরিবেশ, সাম্যবাদ, মানবাধিকার, নারী-পুরুষের অধিকারের সীমা সবই এর অন্তর্গত। ইসলাম পরিবার ব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা সহ জীবনের সকল পর্যায়ে করণীয়-বর্জনীয় শুধু নয়, পাশাপাশি সেসব বাস্তবায়নের দিক নির্দেশনাও দেয়। তাইতো ইসলাম কোনো আচার সর্বস্য ধর্ম নয় বরং পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।

ইসলামের উদ্দেশ্য

পশু-প্রাণীদেরকে আলাদাভাবে ভালো-মন্দ শেখানা লাগে না। তাদের যখন যেটা মন চায় তখন সেটা করে। কারণ, পশু-প্রাণীর তার চাহিদা সীমিত, আর তার ইচ্ছাশক্তির স্বাধীনতা নেই।

অন্যদিকে, মানুষের মন আছে, তার ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে:

মানুষের মনের চাহিদা সীমিত নয়। মন কোনো আইন জানে না, আইন মানে না। মানুষের মন যে কোনো কিছু চাইতে পারে। মন চাইল, আপনি একটুখানি গান শুনতে, নাচ দেখলেন। অন্যের গাছের ফল পেড়ে খেয়ে ফেলতে। মন চাইল, ঘুষ দিতে। মন চাইলো অলসভাবে শুয়ে থাকতে। মন এভাবে কত কিছুই না চায়। -- মন যেটা চায় সেভােই চলতে থাকলে সেটা অন্যদের জন্য কষ্টের হতে পারে।

মানুষ যদি বিচার বিবেচনা করেও চলে, তবুও তার ইচ্ছার স্বাধীনতা এবং ক্ষমতার ব্যাপ্তি এতোটা যে, তার জ্ঞান-বুদ্ধির বাইরেও সে ভুল করতে পারে। বড়রা যেমন ছোট বাচ্চাদেরকে বারবার নিষেধ করতে থাকে; আর বাচ্চারা বোঝে না যে, কেন এতো নিষেধ। তেমনি সৃষ্টিকর্তা শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, কোনটা তার করা উচিত কোনটা নয়। আর সেই শিক্ষা বা গাইডই হলো ইসলাম।

তাই, বলা যায়: মানুষ এমনভাবে জীবন পরিচালনা করবে, যাতে তার নিজের উপকার হয় এবং সাথে সাথে অন্যদের ক্ষতিও না হয়। এইভাবে জীবন পরিচালনা করার জন্য গাইড হলো ইসলাম।

আল-কুরআন - চূড়ান্ত আসমানী গ্রন্থ:

আল-কুরআন হলো সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরীত গাইডলাইন।

আল-কুরআনের সর্বপ্রথম যে অংশটুকু নাযিল হয় তা হলো:

পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু,
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন,
শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।
[৯৬ আলাক: ১-৫]

যুগে যুগে আদম, ইব্রাহিম, মুসা, ইসা (আলাইহিমুস সালাম)তাঁদের সকলের উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক সহ সকল বহু সংখ্যক নবী এসেছেন। পূববর্তী নবীদের উপর যেসব আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল, মূল আরবি ভাষার কুরআন হল তারই সর্বশেষ, পূর্ণাঙ্গ, অপরিবর্তিত চূড়ান্ত সংস্করণ। এতে রয়েছে, মহান সৃষ্টিকর্তা "আল্লাহ তায়ালা"র সৃষ্টি, ধ্বংস, পার্থিব জীবন, মৃত্যু পরের পরোকাল এবং তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্য, আদেশ-নিষেধ-উপদেশ ইত্যাদি বিষয়গুলোর বিষদ বর্ণনা।

এই কুরআন এসেছে, হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক এর মাধ্যমে। ৬০৯ সাল থেকে ৬৩২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি অবতীর্ণ হয়। এতে সর্বমোট ১১৪টি সূরা আছে। আল-কুরআন হচ্ছে সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ আর হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক হচ্ছেন সর্বশেষ নবী। তাঁর মাধ্যমে নবুওয়ের পরিসমাপ্তি ঘোষিত হয়েছে। তাঁর পরে আর নতুন কোনো নবী আসবে না, নতুন কোনো জীবন বিধানও আসবে না।

কেয়ামতের আগ পর্যন্ত মানুষের জন্য, মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কেন্দ্রিক এই ইসলামই হলো আল্লাহ্‌র তায়ালার নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবন ব্যবস্থা (বা ধর্ম)। আর ইসলাম অনুসরণ করার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীতে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে পারবে, একইসাথে পরকালের কল্যাণও নিশ্চিত করতে পারবে।

আরো ভেঙ্গে বললে: আল-কুরআন নাযিলের সময় থেকে নিয়ে, ইসলাম শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো এলাকার নয় বরং পৃথিবীর সকল বর্ণ, গোত্র, জাতি এবং ধনী-গরীব, সাদা-কালো ও আরব-অনারব সকল মানুষের জন্য। আল-কুরআন সকল মানুষের জন্য মুক্তির বার্তা ও অনুসরণিয় গ্রন্থ, হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাঁর উপর(জন্য) শান্তি বর্ষিত হোক হলেন সকল মানুষের জন্য আল্লাহ্‌র নির্ধারীত পথ প্রদর্শক। তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব এবং তাঁর সুন্নত আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।